দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে ২৮ রানে হার
পাঁচ উইকেট নেয়ার পর মুস্তাফিজকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন সাকিব :এএফপি –
বডি ল্যাঙ্গুয়েজও একটা ফ্যাক্টর! ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সেখানেও ঘাটতি ছিল। বড় দলের বিপক্ষে জিততে অসাধারণ কিছু পারফরম্যান্সের প্রয়োজন। এক সাকিব ও মুস্তাফিজ ছাড়া আর কে কী করতে পেরেছেন? পক্ষান্তরে এমন কিছু ভুল রয়েছে। যার খেসারত গুনতে হয়েছে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। অথচ ৩১৪ রান চেজ করে জেতা খুব কঠিন কিছু ছিল না। বিশেষ করে ভারতের বোলিং লাইনের বিপক্ষে। কিন্তু ব্যাটিংয়ে সে আত্মবিশ^াস শুধু সাকিবের ব্যাটেই ছিল। শেষের দিকে সাইফুদ্দিন বেশ ভালো কিছু করেছেন। কিন্তু তার আগেই ম্যাচে পিছুটান দিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ফলে যা হওয়ার তাই। ২৮ রানে হেরে সেমির যে ক্ষীণ স্বপ্ন ছিল, তা শেষ। ভারত তাদের অবস্থান নিয়ে গেছে শক্ত পর্যায়ে। অস্ট্রেলিয়ার পর তারাও সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল এ ম্যাচের মধ্য দিয়ে।
বাংলাদেশ যেসব ম্যাচ জিতেছে সেখানে টপ অর্ডারকে ভালো কিছু করে দেখাতে হয়েছে। বিশেষ করে ওপেনিং জুটি বা এ দুইয়ের অন্তত একজন। অথচ এ ম্যাচে তামিম সৌম্য সরকার দু’জনই ব্যর্থ। রুহিত শর্মার ৯ রানের ক্যাচ ছেড়ে তামিম তাকে সেঞ্চুরি করতে সহায়তা করার পর ব্যাট হাতে অন্যসব ম্যাচের মতোই ব্যর্থ। অভিজ্ঞ এ ব্যাটসম্যান এখনো নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। কেমন যেন একটা জড়তা কাজ করছে এ বাঁহাতির মধ্যে। ৩১ বলে ২২ রান করে আউট তিনি মোহাম্মাদ সামির বলে। এরপর ৩৩ করে আউট সৌম্যও। অথচ দু’জন বেশ ঠাণ্ডা মাথায়ই খেলছিলেন। ক্রিজে সেট হওয়ার পর যখন তাদের কাছে রানের প্রত্যাশা ছিল তখনই তারা আউট। এ ধারায় ছিলেন মুশফিকও। ২৩ বলে ২৪ করে তিনিও প্যাভিলিয়নমুখী। লিটন দাসেরও ঠিক একই অবস্থা। তাহলে রান তুলবেন কে? সাকিব একা বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করেছেন; কিন্তু দায়িত্বশীলদের একের পর এক ব্যর্থতায় তিনিও হাল ছেড়ে দেন। ৭৪ বলে ৬৬ রানের এক ইনিংস খেলে আউট। এরপর যা হয়েছে তা শুধু পরাজয়ের ব্যবধান কমানো ছাড়া আর কিছু না। অফ ফর্মে থাকা সাব্বির প্রেসারটা কিভাবে নেবেন। মাহমুদুল্লাহর ইনজুরির সুবাদে চান্স পেয়েও নিজেকে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। সাইফুদ্দিন ৩৮ বলে ৫১ করে শেষ পর্যন্ত ছিলেন অপরাজিত। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ ওভার আগে ২৮৬ করে।
এর আগে টসে জিতে প্রথম ব্যাটিং করে ভারত ৩১৪/৯ রান নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট ছিল না। মাঝ বিরতিতে লোকেশ রাহুল যেমন বলছিলেন, ‘৩৩০-৩৪০ রানের টার্গেট ছিল আমাদের।’ মাত্র ৯ রানে মুস্তাফিজের বলে যে রুহিত শর্মা ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন তামিম তা ধরতে পারলে রুহিত তো তখনই শেষ। কিন্তু ভারতের সেই ব্যাটসম্যানই কি না করল ৯২ বলে ১০৪ রান। তার চেয়েও ভয়ানক কথা, দুই ওপেনার রুহিত ও লোকেশ মিলে সংগ্রহ করেছেন ১৮০ রান। ভারতের ইনিংসের শেষের দিকের চিত্রের সাথে যা কখনো মেলানো যাবে না। মুস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভারত কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশ^কাপে প্রথম পাঁচ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখালেন এ বোলার। এর মধ্যে ৩৯তম ওভারে দুই ডেঞ্জার ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি ও হারদিক পান্ডিয়াকে আউট (মেডেন ওভার) করার পর শেষ ওভারে আরো দু’জনকে আউট। এ নিয়ে ১৫ উইকেট হলো তার এ আসরে। ভারত শেষের দিকে গিয়ে কিছুটা ভড়কে যায়। শেষ ৫ ওভারে হাতে উইকেট থাকা সত্ত্বেও যে পরিমাণ রান সংগ্রহের কথা বাংলাদেশ তা হতে দেয়নি। শেষ পাঁচ ওভারে ৩৫ রান। ৪ উইকেট। দারুণভাবে কামব্যাক করেছে মাশরাফিরা। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা যেমন মুস্তাফিজের, তেমনি সাকিবেরও। ১ উইকেট পেয়েছেন সাকিব। কিন্তু তিন শতাধিক স্কোরের ইনিংসে ১০ ওভারে মাত্র ৪১ রান দিয়েছেন তিনি। এ ম্যাচে খেলেননি মাহমুদুল্লাহ ও মেহেদি হাসান। তাই তো মোসাদ্দেক বোলিং করেছেন। কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি পার্টটাইম এ বোলার। তবে ওপেনিং জুটি ভেঙেছেন আরেক পার্টটাইমার সৌম্য সরকার। রুহিতকে আউট করার মাধ্যমে। যদিও আসরে নিজস্ব চতুর্থ সেঞ্চুরি এটা রুহিতের। মুস্তাফিজ তার শেষ দুই ওভারে (ইনিংসের ৪৮ ও ৫০তম) মাত্র ৬ রান দিয়েছেন। শেষ ওভারে নিয়েছেন ধোনি ও সামির উইকেট। একটি রানআউটও (ভুবনেশ^র কুমার) করেছেন তিনি এ ওভারেই। ভারতের ইনিংসে দুই ওপেনার ছাড়া পান্ত অ্যাটাকিং খেলেছেন। যদিও ৪১ বলে ৪৮ করে আউট হয়েছেন তিনি সাকিবের বলে। এ ছাড়া ধোনির ৩৩ বলে করা ৩৫। কোহলির ২৭ বলে ২৬ উল্লেখযোগ্য। রুহিত সেঞ্চুরি করেছেন ৯০ বলে। ৪৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ওই সেঞ্চুরি করতে ছক্কা হাঁকিয়েছেন ৫, আর চার হাঁকিয়েছেন ৬টি।
লোকেশ রাহুল ৭৭ রান করে রুবেলের বলে আউট হন। ১ ছক্কা ৬ চার ছিল তার ইনিংসে। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মুস্তাফিজ উইকেটগুলো নিয়েছেন ৫৯ রানের বিনিময়ে। মাশরাফি ৫ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে আর ফেরেননি। অন্যদের মধ্যে রুবেল ৮ ওভারে ৪৮ রান দিয়েছেন। সাইফুদ্দিন উইকেট না পেলেও মোটামুটি ভালো করেছেন। ৭ ওভারে ৫৯ রান দিয়েছেন ভারতের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের মধ্যেও। তামিমের কাছ থেকে ক্যাচ ছাড়ার গিফট পেয়ে সেঞ্চুরি করা রুহিত শর্মা ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশের আর একটি ম্যাচ বাকি। তা পাকিস্তানের বিপক্ষে।
Leave a Reply